Breaking News

বাংলাদেশের ৪০০তম ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের অস্বস্তির ‘দীর্ঘশ্বাস’

বাংলাদেশের ৪০০তম ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের অস্বস্তির ‘দীর্ঘশ্বাস। স্বার্থহীন ভালোবাসা আর উত্তুঙ্গ আবেগের ক্রিকেটে যে অশুভ গ্রহণ চলছে, টেস্ট ও টি২০-তে যে নিজেদের সীমাবদ্ধতায় দুর্বলতার প্রকাশ ঘটছে- তা নিয়ে আগে কানাঘুষা চললেও এখন ক্যামেরার সামনে এসেই স্বীকার করছেন ক্রিকেটাররা। এসবের পরও ওয়ানডে নিয়ে একটা প্রচণ্ড আত্মাভিমান রয়েছে টাইগারদের।

এই ফরম্যাটে দম্ভের সুষুপ্তিও রয়েছে তামিম ইকবালদের। আপন করে নেওয়া সেই ফরম্যাটেই কিনা এবার জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ হারতে হল অবস্থা এতটাই নাজুক গত ২১ বছর পর আফ্রিকার এই দেশটির কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ারও দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে।

বুধবার এই হারারেতেই বাংলাদেশ ওয়ানডেতে নিজেদের চারশতম ম্যাচ খেলতে নামছে। গেল ৩৬ বছরের পথচলায় কতই না উত্থানের গল্প দেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট; হোক না তেমন একটা গল্প বুধবার।

যে ওয়ানডে দল টানা চারটি সিরিজ জিতে জিম্বাবুয়ে গিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকাতে ঐতিহাসিক সিরিজের সঙ্গে যাদের নাম জড়িয়ে আছে- তারা কেন এভাবে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বর দলের কাছে নাস্তানাবুদ হলো? উত্তর দিয়েছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, ‘ছেলেরা ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারছে না।

ক্যামেরার সামনে এর বেশি কিছু বলা কিংবা ভেতরের সমস্যাটা সামনে আনা সম্ভব নয়। তবে দলের মধ্যে আছে অনেক সমস্যা। রয়েছে উপদল, ব্যাটার-বোলারের শ্রেণিভেদ, নতুন-পুরোনোর প্রভাববলয়, বিসিবির সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে নির্বাচকদের চোখ-কান বন্ধ করে কোনোরকম চাকরি করে যাওয়া কোচদের নীরব কৌশল, পরের ম্যাচে টিকে থাকা-না থাকা নিয়ে স্বার্থপরতা।

সেই সঙ্গে আছে একের পর এক মাইলফলক স্পর্শ করে যাওয়ার উন্নাসিকতা- এ সবকিছুই রয়েছে নিজের জায়গা থেকে ‘সুখী ও নিরাপদ থাকার। সবকিছুর মধ্যেই শুধু অনুপস্থিত ‘দলের স্বার্থ’টাই! এভাবেই অশুভ ছায়া পড়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

নব্বই দশকের অচল মানসিকতা দিয়ে আধুনিক স্মার্ট ক্রিকেট চলে না- তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এবারের জিম্বাবুয়ে। এই সিরিজের আগে বাংলাদেশ যে সাতটি ওয়ানডে জিতেছে, তার ছয়টিই জিতিয়েছেন বোলাররা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তাইজুল, নাসুম আর মিরাজ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাসকিন, সাকিব সেরা হয়েছিলেন। আর ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই জয়ের একটিতে নায়ক ছিলেন লিটন, আরেকটিতে মিরাজ।

এখানেই স্পষ্ট, যেদিন বোলাররা ভালো কিছু করতে পারেন, সেদিনই আসে জয়। মিরপুরে বোলারদের জন্য প্রিয় রেডিমেড বাইশ গজ তৈরিই থাকে। বিদেশের মাটিতে গিয়ে পেসবান্ধব উইকেট কিংবা টার্নিং পিচ পেলেও বোলাররা কিছু করে দেখাতে পারেন। তবে এবার জিম্বাবুয়েতে একেবারেই পাটা উইকেট, যেখানে বোলারদের জন্য কিছু নেই বললেই চলে।

সেখানে প্রয়োজন ছিল ব্যাটারদের সাড়ে তিনশর কাছাকাছি রান তুলে বোলারদের কাজ কিছুটা এগিয়ে দেওয়া। কিন্তু বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ যে মানসিকতা নিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটাররা বড় হয়েছেন, সেটা থেকে সরে আসতে পারেননি কেউ।

ওয়ানডের পাওয়ার প্লেতে উইকেট ধরে রেখে রক্ষণে যাওয়া, তারপর শেষ দিকে সুযোগ হলে চালিয়ে আড়াইশ কিংবা তার কিছু বেশি। তিনশ হলেই অনেক কিছু- এমন একটা ধারণা জেঁকে বসেছে দলের মধ্যে।

যেটা দলের ক্ষতির কারণ বলেও মনে করছেন বিকেএসপির পরামর্শক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘যে উইকেটে খেলা হয়েছে, সেখানে তিনশ রান যথেষ্ট নয়। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, এখন তিনশ যথেষ্ট; যা বোলাররা ডিফেন্ড করতে পারবে।

কিন্তু এ ধরনের কন্ডিশনে বোলাররাও বুঝে উঠতে পারেনি। এখানে টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যেও একটা ভয়ের ব্যাপার কাজ করছে বলে মনে হয়। সাহস ব্যাপারটা দেখিনি। এই সাহসিকতার অভাব রয়েছে ব্যাটারদের মধ্যেও।

কোনোমতে ৩০-৪০ করে পরের ম্যাচে টিকে যাও- এই একটা বাজে কৌশল পুরো দলকেই ক্ষতি করছে। কেউ সাহস নিয়ে মারছেন না চার-ছক্কা। দলে তুলনামূলক নতুনরা ভাবছেন স্ট্রাইক রেট যা-ই হোক, স্কোরটাই বড়।

অন্যদিকে, সিনিয়রদের অনেকেই আছেন নিজের মাইলফলক নিয়ে। চল্লিশের ঘরে এসে তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা অনেক বেশি ‘ডট’ খেলছেন। ঠিক এখানেই পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা।

আমাদের শারীরিক গঠন অন্যদের মতো নয়, আমরা পোলার্ডদের মতো চার-ছক্কা মারতে পারি না বলে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা শুনিয়েছেন অধিনায়করা। সিকান্দার রাজা দেখিয়ে দিয়েছেন, ছক্কা হাঁকাতে জিমে গিয়ে পেশি না ফোলালেও চলে মনে প্রচণ্ড জোর আর জেতার জেদ থাকলে সম্ভব করা যায়।

দলের মধ্যে দুটি উপদল রয়েছে। কোনো সফরে গিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণরা কার সঙ্গে কথা বলেন কার সঙ্গে খেতে বের হন- সেটা দিয়েই ধরে নেওয়া হয় কে কোন উপদলের। বিসিবির উচ্চপর্যায়েও এই উপদলের কথা জানা।

কোচিং স্টাফরাও উপদলের ভার বুঝে সেদিকে মত দেন। উদাহরণ টেনে ব্যাপারটি কিছুটা খোলাসা করা যায়। এই যে টি২০ দলে সোহানের জায়গায় মাহমুদউল্লাহকে ফেরানো হলো- এ সিদ্ধান্তটা কার মাথায় প্রথম এসেছিল? খোঁজ নিতে গিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে পরিস্কার তথ্য জানানো হয়নি।

কেউ বলছেন, কোচ রাসেল ডমিঙ্গো চেয়েছিলেন রিয়াদকে; কেউ বলছেন, টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন চেয়েছিলেন; কেউ আবার বলছেন, বিসিবি সভাপতির একক সিদ্ধান্তে রিয়াদকে নেওয়া হয়েছে। আদতে রিয়াদকে নেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচকরা অন্ধকারেই ছিলেন।

কিন্তু দলবদল কিংবা নির্বাচন নিয়ে তাঁদেরই বেশি কথা শুনতে হয় ফেসবুকে। এখানেই প্রশ্ন থেকে যায়, দল নির্বাচনে আদৌ স্বাধীনতা পান কিনা তাঁরা? দলের কিছু প্রভাবশালী ক্রিকেটারের প্রেসক্রিপশনে বাদ পড়তে হয় অনেককে।

দলের এমন তারকা ক্রিকেটারদের অনেক অন্যায্য দাবিও প্রশ্রয় দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। কথা শুনে চলা ক্রিকেটার না হলে কিংবা তাঁর জায়গায় কাউকে হুমকি মনে করলেই বিসিবিপ্রধানের কানভারি করে তাঁদের ছাঁটাই করে দেওয়ার অতীত ঘটনা রয়েছে।

তবে এসব কিছুর প্রমাণ নেই। নিজের নাম বললে ‘শত্রু’ হয়ে যাওয়ার ভয় আছে- তাই এসব নিয়ে আলোচনা চললেও ‘অফ দ্য রেকর্ড’ বলে আগেই নিরাপদে চলে যান সবাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *