বিপর্যয় সামলে ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। ফাইনালের মহারণে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়েছে দাসুন শানাকার দল। টস হেরে শুরুতে ব্যাট করে নানা উত্থান-পতনের পর পাকিস্তানকে ১৭১ রানের বড় টার্গেট দেয় শ্রীলঙ্কা।
তবে সেই বড় রান তাড়া করতে গিয়ে খেই হারায় বাবর আজমের দল। লঙ্কান বোলারদের তোপে রিজওয়ান ও ইফতেখার ছাড়া কেউই উল্লেখযোগ্য স্কোর করতে পারেননি। রিজওয়ান করেছেন ৪৯ বলে ৫৫ আর ৩১ বলে ৩২ রান করেছেন ইফতেখার।
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। অথচ টুর্নামেন্টের শুরুতে তাদেরকে কেউ গোনাতেই ধরেনি। দেশটিতে গত কয়েকমাস ধরে চরম রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট চলছে।
দলে তেমন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নেই। আসরের শুরুটাও হয়েছিল আফগানিস্তানের কাছে বাজেভাবে হেরে। কিন্তু সবকিছুকে জয় করে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বর মুকুট পরল দাসুন শানাকার দল।
আজ রবিবার এশিয়া কাপের ফাইনালে তারা পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে ২৩ রানে। রান তাড়ায় নেমে দিলশান মাদুশাঙ্কার সৌজন্যে কোনো বৈধ বল ছাড়াই পাকিস্তান পায় ৯ রান! প্রথম বল নো। পরের চারটি বল ওয়াইড।
এর মাঝে একটি কিপারের গ্লাভস ফাঁকি দিয়ে চার হয়ে যায়। পরের বলও ওয়াইড হয়। ৬ বারের চেষ্টায় প্রথম বৈধ বলটি করতে পেরেছেন মাদুশাঙ্কা। ওভার শেষ করেন ১১ বলে। ফিরতি ওভারে এসে অবশ্য মাদুশাঙ্কা দিয়েছেন মাত্র ৪ রান।
চতুর্থ ওভারে পাকিস্তানের দূর্গে জোড়া আঘাত হানেন গত ম্যাচেই অভিষিক্ত ডান হাতি পেসার প্রমোদ মাদুশান। পরপর তুলে নেন বাবর আজম (৫) এবং ফখর জামানকে (০)। ২২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে পাকিস্তান।
এরপর রিজওয়ান আর ইফতেখার মিলে ধীরগতিতে জুটি গড়তে থাকেন। দুজনে উইকেটে সেট হতেই শুরু করেন পাল্টা আক্রমণ। ৫৯ বলে ৭১ রানের এই জুটি ভাঙেন প্রমোদ। বদলি ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৩১ বলে ৩২ রান করা ইফতেখার।
এরপর করুনারত্নের বলে নওয়াজ ৬ রানে ফিরলে পাকিস্তান পড়ে বিপদে। তখন তাদের প্রয়োজন ২৮ বলে ৬৯ রান। ৪৭ বলে ৪ চার ১ ছক্কায় ফিফটি তুলে নেন রিজওয়ান। এর পর পরই তার ৫৫ রানের ইনিংস থামে হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে ছক্কা মারতে গিয়ে।
ওই ওভারে আরও দুই উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার জয় নিশ্চিত করে ফেলেন হাসারাঙ্গা। আউট হয়ে ফিরেন আসিফ আলী (০) এবং খুশদিল শাহ (২)। এরপর শাদাব খান ৮ রানে ফিরলে পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
১৯তম ওভারে নাসিম শাহ এসেই প্রমোদকে একটা বাউন্ডারি মেরে পরের বলে ক্যাচ দেন। ৪ উইকেট নেওয়া প্রমোদের ওই ওভারে আসে ১৯ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৩২ রানের। চামিকা করুনারত্নে শেষ বলে বোল্ড করে দেন হারিস রউফকে।
২৩ রানের দারুণ জয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপের ফাইনালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা তুলেছিল ৬ উইকেটে ১৭০ রান। তাদের শুরুটা হয়েছিল খুবই বাজে।
প্রথম ওভারেই নাসিম শাহর বলে ‘গোল্ডেন ডাক’ মারেন কুশল মেন্ডিস। ২৩ রানে হারিস রউফের বলে অপর ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার (৮) বিদায়ে বিপদ আরও বাড়ে। দানুশকা গুনাথিলাকা ফিরেন ৪ বলে ১ রান করে।
৩৬ রানে ৩ উইকেট পড়লেও ধনাঞ্জয়ার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাওয়ারপ্লেতে আসে ৪২ রান। ২১ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৮ রানে ফিরেন ধনাঞ্জয়া। এরপর অধিনায়ক শানাকার (২) বিদায়ে ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন হাসারাঙ্গা ডি সিলভা আর ভানুকা রাজাপাক্ষে। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে ৩৫ বলে ৫৮ রান। হাসারাঙ্গা ২১ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ৩৬ রানে আউট হলেও ৩৫ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন ভানুকা।
নাসিম শাহর করা শেষ ওভারে আসে ১৫ রান। ৪৫ বলে ৬ চার ৩ ছক্কায় ৭১* রানে অপরাজিত থাকেন রাজাপাক্ষে। তার সঙ্গী চামিকা করুনারত্নে ১৪ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে ৩১ বলে ৫৪* রান। ২৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন হারিস রউফ। ১টি করে নিয়েছেন নাসিম-শাদাব আর ইফতেখার।