১১ রানে ৭ উইকেট। সময়ের হিসেব যদি করা যায় তবে ঠিক ঠিক ২৪ মিনিট। বলের হিসেবে ২৩ বল। আসা যাওয়ার মিছিলটা ঠিক এতটাই দ্রুত ছিল বাংলাদেশের জন্য। মেহেদি হাসান মিরাজকে দিয়ে শুরু, শরিফুল
ইসলামে শেষ। মাঝের সময়টা বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের দৈন্যদশার পুরাতন চিত্র। আরও একবার দুইশ রানের আগেই শেষ বাংলাদেশ। ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ হেরেছে ৯২ রানে।
শশব্যস্ত ঢাকা শহরে কেউ যদি জ্যামের কবলে পড়েন, তবে সেই জ্যাম থেকে মুক্তির আগেই বাংলাদেশের এই ব্যাটিং বিপর্যয় আবার শুরু থেকে দেখে ফেলা সম্ভব। টার্গেট ছিল ২৩৬। সেটার জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে ১২০
রান তুলেছিল বাংলাদেশ। ৩ উইকেট পড়েছিল ১৩২ রানে। রহস্যময় স্পিনার আল্লাহ গাজানফারের সঙ্গে রশিদ খানের ঘূর্ণি–জাদুতে সেখান থেকে ১১ রান যোগ করতেই অলআউট।
কিন্তু, বাংলাদেশের ক্রিকেটের গ্রাফটা দেখলে এমন ১১ রানে ৭ উইকেট হারানোর ঘটনাটা খুব একটা দাগ কাটার কথা না। কিছুটা তথ্য উপাত্ত ঘেঁটে দেখলে এক অর্থে বাংলাদেশ ভালোই করেছে! ২০১৪ সালে ভারতের
বিপক্ষে ৮ রান তুলতে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা। সে হিসেবে ১০ বছরে ৩ রানের উন্নতি করেছে টাইগার ব্যাটাররা। মিরপুরে বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচটাকে তাসকিনের ম্যাচ বলা যেতে পারতো।
আইপিএল সূচি থাকায় বাংলাদেশ সফরে আসে ভারতের দ্বিতীয় সারির দল। ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুতেই তাসকিন সেদিন নিয়েছিলেন ২৮ রানে ৫ উইকেট। ভারতের স্কোর ছিল ১০৫।
১০৬ রানের টার্গেটে ৩ উইকেটে ৫০ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। এরপরের অংশটা স্টুয়ার্ট বিনির। যে বিনিকে আসলে হারিয়েই ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেট। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট বোর্ডের
(বিসিসিআই) বর্তমান সভাপতি রজার বিনির ছেলে স্টুয়ার্ট বিনি মাত্র ৪ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। তাকে সাহায্য করেছিলেন মোহিত শর্মা। ২২ রানে ৪ উইকেট ছিল তার।
মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি বিন মর্তুজা, নাসির হোসেনদের সেদিন প্যাভিলিয়নে পাঠাতে সময় নেননি বিনি। ৫০ রানে ৩ উইকেট থেকে ৫৮ রানে ১০ উইকেট। শেষ ৮ রানে ৭ উইকেটের পতন।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সে তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করেছে সেই কৃতিত্ব দিতেই হবে। যদিও ১০ বছরে বাংলাদেশের উন্নতির গ্রাফ কেবল ‘৩ রান।
উন্নয়নের ম্যাচে মুশফিক করেছেন ১ রান মাহমুদউল্লাহ করেছেন ২ রান। যদিও দুইজনের খেলা দেখে বুঝবার উপায় নেই ক্যারিয়ারে দেড় দশকের বেশি সময় পার করে ফেলেছেন দুজনেই।
রশিদ খানের গুগলি মাহমুদউল্লাহ যেমন বোঝেননি। তেমনি মুশফিক বুঝতে পারেননি আল্লাহ গাজানফারের ক্যারম বলটা। দুজনের আউটই ছিল দৃষ্টিকটু। ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় দুজন মিলে বাংলাদেশের উন্নয়নের
সাক্ষী হয়েছেন সত্য, তবে দলের বিপর্যয়েও রেখেছেন অবদান। এমন বাজে পরিসংখ্যানের দিনে আরেকটু স্বান্তনা দিতে পারে বৈশ্বিক চিত্রটা। ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম রানের ব্যবধানে শেষ ৭ উইকেট হারানোর ঘটনা
ঘটেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। রোডেশিয়ানরা ২০০৮ সালে হারারেতে ৩ রানের ব্যবধানে হারিয়েছিল ৭ উইকেট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেদিন রশিদ-গাজানফার জুটি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন আর অজন্তা
মেন্ডিস। ১৪ রানে মুরালি নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। অজন্তা মেন্ডিস নিয়েছিলেন ২৬ রানে ৩ উইকেট। সে তুলনায় বাংলাদেশ করেছে ৮ রান বেশি!
এমনকি এই ৮ সংখ্যার ইতিহাসও কম নয়। ৮ রান তুলতে শেষ ৭ উইকেট হারানোর ঘটনা ওয়ানডে ক্রিকেটে আছে দুইবার। বাংলাদেশ ছাড়া এমন ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংসে। এমনকি ১০ রানে শেষ ৭ উইকেট হারানোর
রেকর্ডও আছে। ১৯৮৬ সালে শারজাহতেই ৪৫ থেকে ৫৫ করতেই ৭ উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। প্রতিপক্ষ সেদিন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৯৩ সালে গোয়ালিয়রে ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের শেষ ৭ উইকেটও ভারত নিয়েছিল ১০ রানের মাথায়।
আর ১১ রানে শেষ ৭ উইকেট হারানোর নজিরও বিশ্ব ক্রিকেটে কম নেই। ১৯৭৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ড, ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১ রানে শেষ উইকেট হারিয়েছে। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার পাশে এই রেকর্ডে বাংলাদেশের নাম বসেছে। ৩ রানের উন্নতির গল্পে এটাও বড় প্রাপ্তি ভেবে নেয়া যেতেই পারে।