Breaking News

স্পেনে জন্মা নেওয়া হাকিমির গোলেই বিশ্বকাপে লজ্জার রেকর্ড ‘লাল বাহিনীর’

স্পেনে জন্মেছিলেন তিনি। সেই আচরাফ হাকিমির পেনাল্টিতেই ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল স্পেন। মঙ্গলবার ‘রাউন্ড অফ ১৬’-এ নির্ধারিত সময় স্পেন এবং মরক্কোর খেলার ফল গোলশূন্য ছিল। অতিরিক্ত সময়ও কোনো গোল হয়নি।

পেনাল্টি শ্যুট-আউটে একটি গোলও করতে পারেনি স্পেন। মরক্কোর চতুর্থ শটে পানেকা কিক মেরে মরক্কোকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার তোলেন। মরক্কোর হয়ে খেললেও আদতে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে জন্মগ্রহণ করেন আচরাফ হাকিমি।

তবে মরক্কোর জনসংখ্যার একটা বড় স্পেনে বাস করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আপাতত প্রায় ৯০ হাজার মরক্কোন বসবাস করেন। স্পেনে কর্মরত মরক্কোন ফুটবল ফেডারেশনের স্কাউট রাবি তাসাকা বলেছিলেন,

‘আমি ওকে ২০১০ সালে আবিষ্কার করেচিলাম। তার সাথে নিয়মিত কথা বলতাম। তাকে দেখার জন্য মাদ্রিদে এসেছিলেন ফেডারেশনের টেকনিকাল ডিরেক্টর। আমার পরিকল্পনার বিষয়ে ওকে জানিয়েছিলাম।

যা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ছিল। আমার মনে হয়, (কোন দেশের হয়ে খেলবে), তা নিয়ে তার মনে কোনো সন্দেহ ছিল। স্প্যানিশ সংবাদপত্র মার্কার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদ্রিদের গেতাফেতে ছেলেবেলা কাটিয়েছিলেন হাকিমি।

ছয় বছর থেকে স্থানীয় ক্লাব কোলোনিয়া ওফিগেভির হয়ে খেলতেন। তারপর রিয়াল মাদ্রিদের অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন। ওইসময় তার বয়স সাত ছিল। একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যখন রিয়ালের অ্যাকাডেমিতে খেলার চিঠি এসেছিল,

তখন প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করেননি হাকিমি। একেবারে ছেলেবেলায় রিয়ালের অ্যাকাডেমিতে পা রাখার থেকেই ফুটবল বিশেষজ্ঞদের নজর কাড়তে থাকেন হাকিমি। মাদ্রিদের সাবেক কোচ জিনেদিন জিদানের সাথে বিশেষ যোগাযোগও ছিল।

জিদানের ছেলের সঙ্গে রিয়ালের যুব দলে খেলতেন হাকিমি। তার ওপর নজর ছিল জিদানেরও। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোনে আলাভেজে যাওয়ার সুযোগ ছিল হাকিমির। সেক্ষেত্রে নিয়মিত প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ মিলত।

তবে জিদান তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কমপক্ষে ২০টি ম্যাচে খেলাবেন। কিন্তু ২০১৬ সালে ধাক্কা খেয়েছিলেন হাকিমি। কম বয়স্ক বিদেশী খেলোয়াড়কে রিয়াল মাদ্রিদ বেআইনিভাবে সই করিয়েছে কিনা,

সেই সংক্রান্ত তদন্তের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হাকিমিকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল ফিফা। যিনি তত দিনে প্রাক-মরশুম সফরে মাদ্রিদের প্রথম দলের হয়ে অভিষেক করে ফেলেছিলেন।

ওইসময় হাকিমির পাশে দাঁড়িয়েছিল মাদ্রিদ। হাকিমি যে স্পেনে জন্মেছেন, সেই সংক্রান্ত প্রমাণও পেশ করা হয়েছিল। পরে হাকিমির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমে তাসাকা বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়, কোথায় কোন বালক জন্মেছে, সেটা দেখার পরিবর্তে শুধুমাত্র অভিবাসীদের তালিকা থেকে উদ্ভট নাম দেখছিল ফিফা। তারা মরক্কোন নাম দেখেছিল এবং বিনা দোষে ওকে শাস্তি দিয়েছিল।

মাদ্রিদের হাসপাতালে যে সে জন্মগ্রহণ করেছে, মাদ্রিদে পড়াশোনা করেছে এবং সেখানেই বড় হয়ে উঠেছে, তা তা দেখানোর জন্য সমস্ত নথি পেশ করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও ওর পরিবার।

পরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল ফিফা। তারপর ২০১৬ সালের অক্টোবরে মরক্কোর সিনিয়র দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় হাকিমির (জুনিয়র পর্যায়েও মরক্কোর হয়ে খেলেছিলেন)।

কানাডার বিরুদ্ধে ৪-০ গোলে জিতেছিল মরক্কো। পরে ধারে মাদ্রিদ থেকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে চলে গিয়েছিলেন। কেন স্পেনের পরিবর্তে মরক্কোকে বেছে নেন হাকিমি? একটি সংবাদমাধ্যমে তাকাসা বলেছিলেন, ‘তিনি নিজেকে একইসঙ্গে মরক্কোন এবং স্প্যানিশ মনে করেন।

স্পেন তাকে যা সুযোগ দিয়েছে, সেজন্য নিজেকে ধন্য বলে মনে করেন। তিনি মরক্কোকে বেছে নিয়েছেন, কারণ তার মা-বাবা মরক্কান। তিনি প্রতি বছর মরক্কোয় যান। তাছাড়া তিনি যখন খুব ছোটো, তখন থেকেই ওকে নিয়ে আমরা আগ্রহী ছিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *