Breaking News
blood-donation
blood-donation

রক্তদান করলে কি আসলেই কোন ক্ষতি হয়?যেনে নিন বিস্তারিত

এই দেশে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। তবে এর পুরোটা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। দেশে রক্তের চাহিদার অভাব আছে। এখনো দেশের অনেকেই রক্তের অভাবে মারা যান। তবে এ প্রাণগুলো রক্ষা করা যায় খুব সহজেই। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় তিন লাখ নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এঁদের ২৭ শতাংশ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণজনিত কারণে ও রক্তের অভাবে মারা যান। অথচ রক্ত সঠিক সময়ে সংগ্রহ করে পরিসঞ্চালন করা গেলে অনেক জীবনই বাঁচানো সম্ভব।

এ প্রাণগুলো অকালে ঝরে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন আমাদের একটু সহানুভূতি, সচেতনতা।আমাদের এক ব্যাগ রক্তই পারে এঁদের জীবন বাঁচাতে।যাঁরা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ প্রাণ রক্ষা করতে সহায়তা করছেন, তাঁদের উৎসাহিত করতে প্রতিবছর ১৪ জুন পালন করা হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমার জীবন বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ’।অনেকে রক্ত দিতে ভয় পান। আসলে রক্তদান একটি সহজ প্রক্রিয়া। যাঁরা একবার রক্তদান করেছেন, তিনি আর রক্তদানে ভয় পান না। তাই ভয়টাকে জয় করাই রক্তদানের প্রধান বাধা।

আজকাল অনেকেই রক্ত দিচ্ছেন। দেশে এখন প্রায় ৭০ ভাগ রক্ত সংগৃহীত হয় আমাদের মতো অপেশাদার বা যাঁরা কখনো রক্তদান করেননি তাঁদের কাছ থেকে। রক্তদান করলে সমস্যা হলে এত লোক কি রক্ত দিত? বরং আপনার এক ব্যাগ রক্তে যদি কারো জীবন বাঁচে, এর প্রতিদান মূল্যমানে হিসাব করা কি সম্ভব? রক্তদান করলে শুধু অন্যজনের উপকার হয় না। রক্তদান করলে আপনিও উপকার পাবেন। প্রথম হলো মানসিক শান্তি। আপনার রক্তে জীবন ফিরে পেয়েছেন কেউ- একবার ভাবুন তো কতটা পরোপকারী কাজ এটি।

একবার চিন্তা করুন, আপনার জীবন বাঁচাতে এক ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন হন্যে হয়ে খুঁজছেন রক্ত। কিন্তু কেউই রাজি হচ্ছে না। রক্তের অভাবে আপনার মূল্যবান জীবন প্রদীপ নিভে গেলে আমাদের সমাজের জন্য কতটা ক্ষতি হবে। তাই সবার জীবনই মূল্যবান। রক্তদান করলে আপনার বাড়বে আপনজন। যার জীবন রক্ষায় আপনি সহায়তা করলেন তিনি না হোক, আপনার প্রয়োজনে অন্য কেউ এগিয়ে আসবে নিশ্চয়। মনে রাখবেন হাদিসে আছে, ‘কেউ যদি কোনো মানুষকে সহায়তা করে তবে তার সাহায্যকারী হয়ে যান স্বয়ং আল্লাহ।’

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রক্ত দিলে কোলস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। কোলস্টেরল যে কতটা ক্ষতিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোলস্টেরল বেশি হলে রক্তনালিতে জমে রক্তনালি সংকুচিত হয়। এতে রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হয়ে দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাকসহ অন্যান্য হৃদরোগ, স্ট্রোক। নিয়মিত রক্তদান করলে এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় অক্সিজেন ফ্রি রেডিকেল তৈরি হয়। এগুলোর জন্য আমরা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বুড়িয়ে যাই। রক্তদান করলে এ কেমিকেলগুলো শরীর থেকে বাইরে বের হয়ে যায়।

ফলে শরীর বিষমুক্ত হয়। তাই রক্তদানে বুড়িয়ে যাওয়া দেরিতে ঘটে।রক্তদানের আগে আপনার স্বাস্থ্য চেকআপ হয় বিনামূল্যে। আপনার রক্তে বেশ কিছু রোগের জীবাণু যেমন হেপাটাইটিস, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, এইডস আছে কি না তা পরীক্ষা হয়ে যায় বিনামূল্যে।আপনি রক্ত দিলে পেশাদার রক্ত বিক্রেতার ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। লাল রক্তের কালো ব্যবসা কমবে, ঘাতক রোগের বিস্তার কমবে, সামাজিক সম্প্রীতি এবং বন্ধন বাড়বে। রক্তদানে কোনো শারীরিক ক্ষতি হয় না।

এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে রক্তদানের ফলে অস্থিরতা, মাথা ঘোরানো, দুর্বলতার মতো ক্ষণস্থায়ী সমস্যা দেখা দিতে পারে।এ সমস্যা সমাধানে মানসিক চাপ নিরসন করা, যত্ন নেওয়া ও ভালো সেবা করা, তরল খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা, দুশ্চিন্তা দূরীকরণে ভূমিকা রাখা, বিশ্রাম করতে বলা, পায়ের দিক উত্তোলন করা, শান্ত এলাকায় স্থানান্তর করা, কপালে, চোখে মুখে ঠান্ডা পানির ছিটা দেওয়া-এসব কাজগুলো করা যেতে পারে। রক্ত দেওয়ার আগে আধা লিটার পানি বা পানীয় পান করা ভালো।

আপনার বয়স যদি ১৮-৬০ বছরের মধ্যে হয়, তাহলে আপনি প্রতি তিন মাস পর পর রক্ত দিতে পারবেন। বছরে আপনার রক্তে চারটি প্রাণ রক্ষা পাক- এ হোক ব্রত।লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *