Sunday, June 1, 2025

বাঁশের বেড়ার তৈরি ঘরে থাকেন সাফ চ্যাম্পিয়ন ‘ঋতুপর্ণা’

Must read

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ি গ্রাম। দুর্গম এই পাহাড়ি গ্রামে বইছে আনন্দের জোয়ার। এই গ্রামের এক সন্তান বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন নতুনভাবে। বলা হচ্ছে দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব বিজয়ী ঋতুপর্ণা চাকমার কথা।

ফাইনালে তার একটি দৃষ্টিনন্দন জয়সূচক গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। আর তার এমন অসামান্য ক্রীড়া নৈপুণ্যতায় আনন্দের বন্যা বইছে মগাছড়ি গ্রামে। রাঙামাটি চট্টগ্রাম মহাসড়কের মূল সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ

ধানক্ষেত, ছোট বাঁশের সাঁকো, পাহাড়ি পথ আর ঝিরি ও দুর্গমতা মাড়িয়ে ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি। টিনের চালা ও বাঁশের বেড়ার একটি ঘরে থাকেন ঋতুপর্ণা। চার বোন ও এক ভাইয়ের সংসারে ঋতুর বয়স যখন ১১ তখন

ক্যান্সারে মারা যান তার বাবা এবং একমাত্র ভাই দুই বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যায়। বাবা-ভাইবিহীন সংসার টেনে নিচ্ছেন তার মা ভূজোপতি চাকমা। চার বোনের মধ্যে ছোট ঋতু। বড় তিন বোনের বিয়ে হয়েছে।

তাই বাড়িতে একাই থাকেন মা ভূজোপতি চাকমা। ভূজোপতি চাকমা বলেন, আমি খুব খুশি হয়েছি, মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, আশীর্বাদ করতে বলেছে। আমি চাই ও আরও ভালো খেলে দেশের সুনাম বয়ে আনুক।

তিনি আরও বলেন, গতবার যখন ঋতুরা জিতেছিল তখন প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাই আমার বাড়িতে এসেছিলেন। তখন বাড়িতে আসার রাস্তাসহ অনেক কিছু করে দেওয়ার কথা বললেও কিছুই করে দেননি।

তার মেজ বোনের জামাই সুদীপ চাকমা বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় আমরা সবাই একসঙ্গে খেলা দেখেছি। যখন ঋতু গোল করেছে এবং বাংলাদেশ জিতেছে তাতে সকলে অনেক আনন্দিত হয়েছি।

খেলা শেষে ঋতু ফোন করেছে, সেও খুব খুশি সেরা খেলোয়াড় হতে পেরে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঋতুর মগাছড়ি গ্রামে আনন্দঘন পরিবেশ। এলাকাবাসী ঋতুর মাকে অভিনন্দন জানাতে বাসায় হাজির হচ্ছেন।

ঘরে শোভা পাচ্ছে ঋতুর বিভিন্ন সময়ে অর্জন করা মেডেল, ক্রেস্ট ও ট্রফি। এলাকাবাসী জানান, ঋতুর এই অর্জনের পথটি এত মসৃণ ছিল না। ফুটবলের প্রতি একাগ্রতা আর ভালোবাসার কারণে এতো প্রতিবন্ধকতাকে

পাশ কাটিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্ব মঞ্চে। তারা বলেন, আমাদের গ্রামের মেয়ে দেশের হয়ে ফুটবল খেলে যে সম্মান বয়ে এনেছেন, সেটা আমাদের জন্য গর্বের। কতটা ভালো লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে

পারবো না। আমরা চাই তারা দেশের হয়ে খেলে আরও সুনাম বয়ে আনুক। এলাকার বাসিন্দা ভুবন জয় চাকমা বলেন, প্রথমবার যখন জিতেছিল তখন প্রশাসনের অনেকেই এসেছিলেন। রাস্তা, বাড়িসহ অনেক কিছুই করে

দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দুই বছর পার হলেও কোনো কিছুই হয়নি। এতে আমরা খুব হতাশ হয়েছি। ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে হেঁটে ঋতুর বাসায় যেতে হয়।

টানা দ্বিতীয়বার সাফজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় গর্বিত তাদের সাবেক স্থানীয় কোচ শান্তি মনি চাকমা। তিনি বলেন, সেই দিনের ছোট্ট মেয়েগুলো আজ দেশের হয়ে খেলে দেশকে বিজয়ী করেছে, পাশাপাশি তারা শ্রেষ্ঠ

খেলোয়াড় ও শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছে। এটা আমার জন্য গর্বের। আশীর্বাদ করি ওরা আরও এগিয়ে যাক। ঋতু, রূপনা ও মনিকাদের আঁতুড়ঘর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা চাকমা আরও বলেন,

ওরা আমাদের সন্তান। এখান থেকে ওরা ফুটবল খেলা শুরু করেছে। আজ দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করছে এতে আমরা খুশি। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওদের সংবর্ধনার দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article