Breaking News

পদ্মা সেতুর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন নেই: মাশরাফি

পদ্মা সেতু, বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম। অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেও দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

জুনেই সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে খুলে যাবে যোগাযোগের নতুন দুয়ার।

শুধু তাই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসানও হবে এতে। উদ্বোধনের প্রাক্কালে পদ্মা সেতু নিয়ে প্রশংসায় ভাসছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা এখন দেশের মানুষ থেকে শুরু করে বিদেশেও।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার কণ্ঠেও ঝরেছে প্রশংসা বাক্য। তিনি শুধু এটুকু স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, পদ্মা সেতুর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতো কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে পদ্মা সেতু যে কতটা জরুরি ছিল, সে সম্পর্কে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি নাতীদীর্ঘ নিবন্ধ রচনা করেছেন তিনি। সেখানেই বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মাশরাফি।

তিনি যা লিখেছেন, সেটা পুরোপুরি তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য। ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু কতটা জরুরি, ওই পথে চলাচলের অভিজ্ঞতা ছাড়া তা আসলে বোঝা খুবই কঠিন।

দুটি ঈদের কথা উল্লেখ না-ই করলাম, তখন তো গোটা দেশের মানুষই নিউজে দেখতে পায় কতটা কষ্ট করে মানুষ নদী পার হয়। কিন্তু শীতকালে যে কী অবস্থা হয়, সেটা কেবল তারাই বোঝে, যাদের এই অভিজ্ঞতা হয়।

তার ওপর নানা সময়ে নিম্নচাপ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তো কথাই নেই, সারা রাত ফেরি বন্ধ। বছরজুড়ে নানা সময়ে গাড়ির সিরিয়াল যখন শুরু হয়, বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ঘাটে বসে থাকতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। শতশত মালবাহী ট্রাক থাকে অপেক্ষায়, কাঁচামাল তো ঘাটেই পঁচে যায়, এসব মোটামুটি নিয়মিত চিত্র।

এরপর যদি নদীর স্রোতে ঘাট ভেঙে যায়, যন্ত্রণা তখন আরও বেড়ে যায়। বচেয়ে বেদনাদায়ক ব্যাপার হয়, যখন কোনো মুমূর্ষু রোগী নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে। প্রতিটি মিনিট তখন মনে হয় অনন্তকাল। ওই পরিবার তখন কতটা অসহায় থাকে, কেউ ওই অবস্থায় না পড়লে বোঝা দায়।

ঘাটেই রোগী মারা গেছে, ঢাকায় এনে চিকিৎসা করানো যায়নি, এরকম নজির আছে অনেক। প্লেনে বা হেলিকপ্টারে রোগী আনার সামর্থ্য কজনেরই বা আছে।এছাড়াও আরও কত যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, এই পথের নিয়মিত যাত্রীরাই কেবল বোঝে। সেই যন্ত্রণাময় দিনগুলি শেষ হতে চলেছে।

অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। কোটি কোটি মানুষের কাছে এটা স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু। অনেকে কখনও কল্পনাও করতে পারেননি, জীবদ্দশায় পদ্মার ওপর সেতু দেখতে পাবেন।

এটা স্রেফ ইট-সিমেন্টের সেতু নয়, এই অঞ্চলের মানুষের কাছে এটা অনেক আবেগ-অনুভূতির প্রতিশব্দ। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এসব সমস্যার সমাধান তো এখন হবেই, এই অঞ্চলে এখন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে, বেকারত্ব দূরীকরণে তা ভূমিকা রাখবে, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে।

ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না। সমস্ত রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে সবার থেকেই একটি ধন্যবাদ অন্তত আপনার প্রাপ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *