Breaking News

ক্রিকেটারদের মুখ বাঁধা, স্ত্রীরাই যখন ক্রিকেটারদের ‘ঢাল’

ক্রিকেট আবেগের খেলা নয়। মাঠের পারফরম্যান্সই এখানে মূল কথা। মাঠের সেই পারফরম্যান্স দিতে না পারলে বড় নাম নিয়েও টিকে থাকা যায় না। ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা হালের ইয়ন মরগ্যান বা অ্যারন ফিঞ্চের দিকে তাকান।

তারা দেশকে কত কত অর্জন এনে দিয়েছেন, কিন্তু যখনই ফুরিয়ে গেছেন, বিদায় নিতে হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই সংস্কৃতিটা নেই। ক্রিকেটাররা নিজে থেকে সরতে চান না, তাদের সরিয়ে দিলেও হয় প্রবল সমালোচনা।

দলে থাকলে সমর্থকরাই হয়তো একটা সময় বলতে থাকেন, এই ক্রিকেটারকে দিয়ে আর হবে না। কিন্তু যদি কাউকে বাদ দেওয়া হয়, সেটি নিয়েও শুরু হয় প্রবল সমালোচনা। সম্প্রতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়া নিয়ে এমনই সমালোচনা চলছে।

সমর্থকরা অবশ্য আলোচনা-সমালোচনা করার অধিকার রাখেন। তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। আর কখনই কোনো সিদ্ধান্তে সবার শতভাগ সমর্থন পাওয়া যায় না। সমর্থকদের সমালোচনাকে তাই ইতিবাচকভাবেই নিতে হবে।

কিন্তু আলোচনাটা শুধু ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে থাকলে কথা ছিল। ইদানীং এই সমালোচকদের তালিকায় যোগ হয়েছেন ক্রিকেটারদের স্ত্রীরাও। কিছু একটা হলেই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন অস্ত্র হিসেবে।

সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির বরাররই এই তালিকায় এগিয়ে। সাকিব কদিন পর পর বিতর্কে জড়ান, কদিন পর পর স্বামীর পক্ষ হয়ে নানা স্ট্যাটাস দিয়ে আলোচনায় আসেন তার স্ত্রী।

এর আগেও বোর্ড, সাংবাদিক কিংবা সমর্থকদের উদ্দেশ্য নানা কটু স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচনা কুড়িয়েছেন সাকিবপত্নী শিশির। সাকিব কদিন আগে জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের সঙ্গে যুক্ত হন। যা নিয়ে হয় অনেক নাটক।

শেষ পর্যন্ত বিসিবি সাকিবকে বাধ্য করে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করতে। এরপরই দৃশ্যপটে হাজির হন সাকিবপত্মী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসির ইমোজি পোস্ট করেন তিনি।

তবে বাংলাদেশের অন্য ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা এতদিন এভাবে সরব ছিলেন না। সাম্প্রতিককালে তাদেরও দেখা যাচ্ছে স্বামীর হয়ে ব্যাট ধরতে। সর্বশেষ এই ‘খোঁচাখুঁচির’ খেলায় যোগ দিলেন মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকের স্ত্রী।

অনেক দিন ধরেই মুশফিকের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন রাখঢাক না রেখেই বলেছিলেন, মুশফিককে নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

গত ৮ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘রিয়াদ টেস্ট থেকে সরে এসেছে। তামিম টি-টোয়েন্টি খেলছে না। মুশফিক এখনও খেলছে, আমি নিশ্চিত ওর সিদ্ধান্তও জানা যাবে।

ও নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করছে। আমরা চাই না আমাদের খেলোয়াড়রা মন খারাপ করুক। তারা হাসিমুখে খেলুক। নিজেরা সিদ্ধান্ত নিক। যত তাড়াতাড়ি তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তত ভালো।

যদি সিদ্ধান্ত না নেয় তো একটা সময় আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর এক সপ্তাহ পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে স্পর্শ করেন ৫ হাজার রানের মাইলফলক।

সেই সময়টাকেই মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বেছে নেন মুশফিকের স্ত্রী জান্নাতুল মন্ডি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বিসিবি সভাপতিকে ইঙ্গিত করে লিখেন, ‘আমরা হাসিমুখেই বিদায় নেবো ইনশাআল্লাহ।

তবে আপনাদের রিপ্লেসমেন্ট আছে তো? সেদিকেও একটু নজর দিলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন হতো! মুশফিকের স্ত্রীর মুখ বন্ধ হয়নি। বরং এবার নতুন করে এই তালিকায় যোগ হয়েছেন তার বড় বোন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের স্ত্রী জান্নাতুল কাওসার মিষ্টি।

মাহমুদউল্লাহর এবার বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি। বর্ষীয়ান এই ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ত্রী মিষ্টি লিখেছেন, ‘এই দেশে যোগ্য লোকের যোগ্যতার মূল্যায়ন হয় না, হবেও না।

এই স্ট্যাটাসে আবার কমেন্ট করে যেন আগুনে ঘি ঢেলেছেন মুশফিকের স্ত্রী। বোনের স্ট্যাটাসে মন্ডির মন্তব্য, ‘আরে নাহ! তাদের দলে এখন অনেক হার্ড হিটার রয়েছে। বলে বলে ছয় আর ছয়।

এখন প্রশ্ন হলো, ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা কেন এমনভাবে গর্জে উঠছেন? কেন তারা জনসম্মুখে এভাবে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। অনেকে আবার এমনও মনে করছেন, ক্রিকেটাররা বোর্ডের কোড অব কন্ডাক্টের কারণে অনেক কিছু মুখ ফুটে বলতে পারেন না।

তাই তারাই স্ত্রীদের দিয়ে এমন সব স্ট্যাটাস লেখান। সত্যিই কি তাই? সত্যিটা কি, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের স্ত্রীদের এমন লড়াই সাধারণ ক্রিকেট ভক্তরা মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তাদের শুধু একটাই প্রশ্ন- এই রেষারেষির শেষ কোথায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *