বোলারদের ছন্দহীন বোলিংয়ের খেসারত দিল টাইগাররা। বৃষ্টির কারণে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় আজ দ্বিতীয় ম্যাচের গুরুত্ব ছিল অনেক। এই ম্যাচে যারা জিতবে তারা সিরিজে এগিয়ে যাবে।
রবিবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টাইগারদের ৩৫ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল উইন্ডিজ। ক্যারিবিয়ানদের ১৯৩ রানের চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান সংগ্রহ করে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ৫২ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। ১৯৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দলকে কখনোই মনে হয়নি এই রান টপকিয়ে ম্যাচ জিততে পারার আত্মবিশ্বাস আছে।
বরং জয়-পরাজয় ভুলে ২০ ওভার ব্যাট করতে পারাটাই যেন বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ব্যাটসম্যানদের। অথচ বলা হচ্ছে, এই সিরিজ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসতে যাওয়া আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে !
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রায় প্রতি ম্যাচেই বদল আসছে ওপেনিংয়ে। আজও তার ব্যত্যয় হয়নি। মুমিন শাহরিয়ার না থাকায় তিন থেকে তুলে ইনিংস শুরু করতে পাঠানো হয় লিটন দাসকে।
তবে টেস্ট সিরিজ থেকে রান খরায় ভোগা এই ডানহাতি ফিরে যান ৫ রানে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যাট চালিয়ে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম বলে ক্যাচ দেন লিটন। ম্যাককয়ের করা পরের বলেই বোল্ড হন এনামুক হক বিজয়। ৪ বলে ৩ করেন তিনি।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ যেন বাকিদের আয়নায় নিজেকে খুঁজছেন। ভালো শুরুর বার্তা দিয়েও তার ইনিংস থামে ৭ বলে ১১ রানে। এনিয়ে টি-টোয়েন্টিতে নবম বারের মতো ত্রিশ রানের কোটা ছুঁতে ব্যর্থ দলপতি।
মাহমুদউল্লাহ সাজঘরে ফিরলে দলীয় ২৩ রানে ৩ উইকেট কারিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ দল। এরপর খানিক চেষ্টা করেছিলেন সাকিব আল হাসান আর আফিফ হোসেন। তবে লাভ হয়নি।
চতুর্থ উইকেটে দুইজনের পার্টনারশিপ থেকে আসে ৪৪ বলে ৫৫ রান। আফিফ ২৭ বলে ৩৪ রানে স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। এরপর ৬ ওভারে জয়ের জন্য যখন ১০০ রান প্রয়োজন, তখন ১৩ বলে ৭ রানের ‘টেস্ট’ ইনিংস খেল আউট হন নুরুল হাসান সোহান।
সাকিব অবশ্য একপ্রান্তে ধরে রাখেন, তবে সতীর্থদের যাতায়াতের মিছিলে প্রয়োজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পারেননি।সাকিব অবশ্য পরে ফিফটির দেখা পেয়েছেন, তবে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে ৪৫ বলে পাওয়া সেই অর্ধশতক একেবারেই মূল্যহীন।
শেষদিকে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে তিনি যখন হাতে খুলে ব্যাটিং শুরু করেন, তার বেশ আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে সফরকারীরা। সাকিবের ৫টি চার আর ৩টি ছয়ে ৫১ বলে ৬৭ রানের ইনিংসটি হারের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু।
সঙ্গে মোসাদ্দেকের ১১ বলে ১৫ রানের সুবাদে ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানে থামে বাংলাদেশ দলের ইনিংস। এতে ৩৫ রানে পরাজয় বরণ করতে হয় মাহমুদউল্লাহর দলকে।
ফলে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। এর আগে ডোমিনিকায় টস জিতে ব্যাট করতে নামে উইন্ডিজ। তবে ইনিংসের শুরুটা ভালো ছিল না তাদের।
দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলেই কাইল মায়ার্সকে বোল্ড করেন অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান। ৯ বলে ১৭ রান করেন মায়ার্স। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে আসে দ্বিতীয় সাফল্য। সাকিবের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন শামরাহ ব্রুকস।
শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। শূন্য রানে ফেরেন ব্রুকস। ২৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ওপেনার ব্র্যান্ডন কিংকে নিয়ে দলের হাল ধরেন নিকোলাস পুরাণ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ব্যাট চালিয়ে খেলে দুইজন জমা করেন ৭৪ রান।
দুইজনই ছুটছিলেন অর্ধশতকের দিকে। তখন ষষ্ঠ বোলার হিসেবে হাত ঘোরাতে এসে দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মোসাদ্দেক। ইনিংসের ১৩তম ওভারে কোনো রান না দিয়েই পুরাণকে ফেরান তিনি। ৩০ বলে ৩৪ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন উইন্ডিজ অধিনায়ক।
এরপর ব্যক্তিগত ফিফটির কোটা পূর্ণ করেন কিং। ৩৬ বলে আসে টি-টোয়েন্টিতে তার এই তৃতীয় অর্ধশতক। পরে কিংকে একপাশে দর্শক বানিয়ে রেখে ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন রভম্যান পাওয়েল।
বাংলাদেশি বোলারদের ওপর ধ্বংসলীলা চালিয়ে মাত্র ২০ বলে ফিফটি করেন তিনি। পাওয়েল অর্ধশতক করার আগের বলটিতেই অবশ্য আউট হন কিং। শরিফুলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাকিবের হাতে ক্যাচ দেন ৫৭ রানে।
পরে রোমারিও শেইফার্ড ৪ বলে ২ রান করে আউট হলে পাওয়েল ২টি চার ও ৬টি ছয়ের সাহায্যে ২৮ বলে ৬১ রান করে অপরাজিত থাকেন। সঙ্গে শেষদিকে স্মিথের ৪ বলে ১১ রানের ঝড়ো ইনিংসের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ১৯৩ রানের পুঁজি পায় উইন্ডিজ।
এছাড়া শেখ মেহেদি হাসান ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। মোসাদ্দেক হোসেন ১ ওভার করে একটি মেইডেনসহ ১ উইকেট নিলেও তাকে আর বোলিংয়ে আনেননি মাহমুদউল্লাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ১৯৩/৫ (২০ ওভার) (কিং ৫৭, পুরান ৩৪, পাওয়েল ৬১*; শরিফুল ২/৪০ সাকিব ১/৩৮, মেহেদী ১/৩১)
বাংলাদেশ- ১৫৮/৬ (২০ ওভার) ( আফিফ ৩৪, সোহান ৭, মোসাদ্দেক ১৫, সাকিব ৬৮*, ; শেফার্ড ২/২৮, ম্যাকয় ২/৩৭)