দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা সিরিজে রান পাননি। চাপ থেকে মুক্ত হতে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এখন তার টেস্ট ক্রিকেট থেকেও সাময়িক বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ টেস্ট দলের নতুন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও মনে করেন, দরকার পড়লে অল্প দিনের বিশ্রাম নিতে পারেন মুমিনুল। তবে সিদ্ধান্তটা কোচ-নির্বাচকরা বা অধিনায়কের দিক থেকে না আসে খেলোয়াড়ের দিক থেকেই আসাই ভালো।
অ্যান্টিগা টেস্ট শেষে সাকিব বলেন, ‘মুমিনুলের সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হয়। ও যদি মনে করে ওর বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন, সেটা ওর সিদ্ধান্ত। তবে মাত্র একটি ম্যাচ শেষ হয়েছে। এ নিয়ে কথা না বলাই ভালো। হাতে দু’দিন সময় রয়েছে, তারপর দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে ভাবা যাবে।
নিঃসন্দেহে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার তিনি। শুরুতে তো ঈর্ষাজাগানিয়া ব্যাটিং করতেন। একের পর এক সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরিতে মুমিনুল এতটাই স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং শুরু করেছিলেন যে, সবাই বলাবলি করতে লাগলো বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যান তিনি। ১১টি সেঞ্চুরিই মুমিনুলের সে সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়।
সেই মুমিনুলের কাঁধে অধিনায়কত্বের ভার আসার পর থেকেই যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। নেতৃত্বের চাপ সামলাতে গিয়ে নিজের সহজাত ব্যাটিংটাই হারিয়ে ফেলেছেন। নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও সেই সহজাত ব্যাটিং ফিরে আসেনি তার হাতে।
শেষ ৬ টেস্টের ১১ ইনিংসে মুমিনুলের ব্যাট থেকে দুই অংকের ঘল ছোঁয়া একটি মাত্র ইনিংস বের হয়ে এসেছে। বাকি ১০টিতে দুই অংকের ঘরই ছুঁতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে আবার চারটিই শূন্য, রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে উইকেটে টিকে ছিলেন ১৫ মিনিট। বল খেলেছেন ৬টি। কোনো রান করতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮ মিনিট উইকেটে ছিলেন। ১২টি বল মোকাবেলা করেছেন। এই ১২ বলেই দেখা গেছে মুমিনুল কতটা নড়বড়ে। তার আত্মবিশ্বাস বলতে কিছুই নাই। একটি বাউন্ডারি হয়েছিল ব্যাটের কানায় লেগে। এরপর কাইল মায়ার্সের ফাঁদে পড়ে এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন।
মুমিনুলের এই বাজে পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়ছে পুরো দলের ওপর। যে অবস্থায় দল তার ওপর আস্থা রাখার কথা, সে অবস্থায় মুমিনুল উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসছেন, দলের বিপর্যয় রোধ করতে পারছেন না।
অ্যান্টিগা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭ উইকেটে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাছে মুমিুনলের বিষয়ে প্রশ্নই করা হয়। যদিও সাকিব এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাইলেন না।
তবে শুধু এটুকু বললেন, ‘মুমিনুল বিরতি চাইলে সেটি হতে পারে’। যদিও সাকিব চান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সময় নিতে। তিনি বলেন, ‘এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল। যেটা হচ্ছে, ওর সঙ্গে সব সময় কথা হয়।
আবারও কথা হবে। ও যদি মনে করে ওর ব্রেক দরকার আছে, সেটা হতে পারে। এখন আসলে একটা ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বা চিন্তা করাটা ভালো কিছু না। পরের দুইদিন আমাদের বিরতি আছে।
এরপর যখন সেন্ট লুসিয়াতে অনুশীলন করব, ওই দিনই চিন্তা করব, আমাদের দলের জন্য কোনটা ভালো হতে পারে। শুধু মুমিনুলই নন, বাংলাদেশের টপ অর্ডার সাম্প্রতিক সময়ে অনেক খারাপ করছে।
দ্রুত উইকেট চলে যাচ্ছে। একটা উইকেট পড়লে পরেরগুলোও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, কে আগে আউট হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা সিরিজেও দেখা গেছে এ অবস্থা। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও দেখা গেলো একই চিত্র।
এ কারণে শুধু মুমিনুলকে নিয়ে চিন্তা নয়, সাকিবের মতে এটুকু পরিবর্তন আনলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি বলেন, ‘খুব বেশি বদলালে যে খুব যে ভালো কিছু হবে, আপনি সেটির গ্যারান্টি দিতে পারবেন না।
যেটা বললাম, একটা পরিসংখ্যানের কথা বলছিলাম, শেষ ১৩-১৪-১৫ বা এমন ইনিংসে ১০০-এর নিচে ৪ বা ৫ উইকেট হারিয়েছি (সর্বশেষ ১৬ ইনিংসে ১০০ বা এর নিচে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়েছে ১৩ বার)। সে জায়গা থেকে চিন্তা করলে, ওখানে অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
তবে এখনও আশাবাদী সাকিব। তিনি মনে করেন, সবাই একসঙ্গে চেষ্টা করলে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘সমন্বিত দলীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আসলে আমরা বের হয়ে আসতে পারি এখান থেকে।
বের হয়ে আসা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। এ জায়গায় আগেও পড়েছি, বের হয়েও এসেছি। আমার বিশ্বাস আছে, আমরা ফিরে আসতে পারব।’