Breaking News

উইকেট কিপার ব্যাটার থেকে বল হাতে পেলেন ৪ উইকেট অবিশ্বাস্য রেকর্ড পুরানের !

পাঞ্জাব কিংসের জার্সিতে অবিশ্বাস্য ক্ষীপ্রতা আর দারুণ দক্ষতায় শূন্যে ভাসা বল ধরে ছক্কা বাঁচিয়েছিলেন নিকোলাস পুরান। ২০২০ আইপিএলে পুরানের সেই সেভকে নিজের দেখা জীবনের সেরা সেভ হিসেবে দাবি করেছিলেন শচিন টেন্ডুলকার।

ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তির সুর ধরে জন্টি রোডস তো বলেই দিয়েছিলেন, এটিই সর্বকালের সেরা সেভ! পুরান কতটা ভালো ফিল্ডার নিশ্চয় বুঝতে বাকি নেই। উইকেট কিপার ব্যাটার হিসেবে বর্তমানে পুরো বিশ্ব মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরান।

আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ের দক্ষতা থাকায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে একেবারে হটকেক। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন দুর্দান্ত ফিল্ডার কিংবা বিধ্বংসী ব্যাটারের পরিচয়ে। পুরানকে পরিচয়কে করে দিতে অবিশ্বাস্য ফিল্ডার, উইকেট কিপার, ঝড়ো ব্যাটিংয়ের বিজ্ঞাপন, এই শব্দগুলোই যথেষ্ঠ।

অথচ মুলতানে পুরান ছাড়িয়ে গেলেন নিজের তিন পরিচয়কেই। পাকিস্তানের মুলতানে পুরানকে দেখা গেছে বোলার হিসেবে। লাইনটা পড়ার পর খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই পারেন।

খানিকটা অবিশ্বাস্যও লাগতে পারে। কারণ উইকেট কিপার হওয়ায় সচরাচর বোলিংয়ে দেখা যায় না তাকে। তবে বোলিংটা যে কখনও করেননি, ব্যাপারটা একেবারেই এমন নয়।

বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল, তবে সেটা যতসামান্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একবারই বোলিং করেছেন পুরান। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে তিন বলের বেশি করা হয়নি ক্যারিবীয় এই ক্রিকেটারের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারের দিনে ৬ রান ‍গুনতে হয়েছিল পুরানকে।

ক্যারিয়ারে আরও একবার বল হাতে নিয়েছিলেন ডানহাতি এই স্পিনার। সেটি অবশ্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। মাত্র ১ ওভার বোলিং করা পুরান উইকেটও নিয়েছিলেন একটি। খরচ করতে হয়েছিল মোটে তিন রান।

অথচ মুলতানে পুরানের ঝুলিতে ৪ উইকেট। পাকিস্তানের টপ অর্ডারকে রীতিমতো শেষ করে দিয়েছেন ডানহাতি এই স্পিনার। ইনিংসের ১৩তম ওভারে পুরান যখন বোলিংয়ে আসেন ততক্ষণে জমে ওঠেছে ফখর জামান ও ইমাম উল হকের উদ্বোধনী জুটি। প্রথম ওভারে ৩ রান দিলেও সাফল্য মেলেনি তার।

নিজের দ্বিতীয় ওভারে অবশ্য ৮ রান খরচা করতে হয়েছিল তাকে। তবে তৃতীয় ওভারে এসেই সাফল্য মেলে পুরানের। ডানহাতি এই স্পিনারের ইয়র্কার বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ফখর। তাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম উইকেট পান পুরান।

এরপর একে একে প্যাভিয়লনে ফেরান ইমাম, মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং মোহাম্মদ হারিসকে। ৪৮ রানে ৪ উইকেট নেয়া পুরানই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম অধিনায়ক, যিনি পাকিস্তানের মাটিতে দুইয়ের অধিক উইকেট নিয়েছেন।

উইকেটকিপারদের উইকেট নেয়ার ঘটনাটা অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে উইকেটকিপার হওয়া সত্ত্বেও উইকেট নেয়ার কীর্তি আছে মহেন্দ্র সিং ধোনি, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, তাতেন্দা টাইবু কিংবা মার্ক বাউচারের মতো ক্রিকেটারদের।

২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে ৬ ওভার হাত ঘুরিয়েছিলেন ধোনি। সেদিন ট্রেভিস ডওলিনকে প্যাভিলিয়নের পাঠিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০১১ ইংল্যান্ড সফর এবং ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, দুই জায়গাতেই বল করেছিলেন ধোনি।

এমনি কেভিন পিটারসেন ও মাহেলা জয়াবর্ধনেকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছিলেন ভারতের সফলতম সাবেক এই অধিনায়ক। যদিও রিভিউ নিয়ে তারা দুজনই বেঁচে গিয়েছিলেন।

গিলক্রিস্টের উইকেটটা অবশ্য আইপিএলে। নিজের প্রথম বলেই সেদিন হরভজন সিংকে আউট করেছিলেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। বাউচার, টাইবু এবং সৈয়দ কিরমানিরও রয়েছে একটি করে উইকেট।

এদিকে এমন কীর্তির জন্য আইপিএলকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন পুরান। আইপিএলের এবারের আসরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটার। দলটির হয়ে পুরানের কাজটা অবশ্য ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনটা সামলানো।

তবে এর মাঝেও বল হাতে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছিলেন পুরান। বোলিংয়ে উমরানের মালিকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জেও লড়েছেন তিনি। সময়টা চলতি বছরের এপ্রিলের ১ তারিখ। অনুশীলনে পুরানের পাশে বসে ব্যাটিংয়ের জন্য প্যাড-গ্লাভস পড়ে প্রস্তুত হচ্ছিলেন উমরান।

কাশ্মীরের এই তরুণ যখন ব্যাটিংয়ের যখন প্রস্তত হচ্ছিলেন, তখন টম মুডিকে লক্ষ্য করে পুরান জানতে চান, ‘সে (উমরান) কি স্পিনের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে যাচ্ছে?’ মুডিও উত্তরে জানালেন, ‘হ্যাঁ, সে স্পিন খেলবে। হায়দরাবাদের কোচের এমন উত্তরের পর পুরানের কনভারসেশনের সঙ্গী উমরান।

তরুণ এই পেসারের কাছে জানতে চাইলেন, ‘আমার কোন বল তুমি খেলতে চাও? অফ স্পিন নাকি লেগ স্পিন?’ উমরান অবশ্য জোর গলায় বলে বসলেন, ‘তোমার যা ইচ্ছে করো।’ পুরান আরও একবার জানতে চাইলেও উমরান এবার একটু নির্দিষ্ট করেই বললেন। সঙ্গে পুরানকে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিলেন।

হেলমেট ঠিক করতে করতে উমরান বলে বসলেন, ‘লেগ স্পিন, অফ স্পিন কিংবা থ্রো। আমি তোমার এক ওভারে চার এবং ছক্কা মারার জন্য যাচ্ছি।’ পুরান চ্যালেঞ্জ নিলেন আর বললেন, ‘এক ওভারে? আসো।’ এরপর কখনও বাঁহাতে স্পিন আবার কখনও ডানহাতেও অফ স্পিন কিংবা লেগ স্পিন ছেড়েছেন। তবে উমরানের চ্যালেঞ্জে জিততে পারেননি পুরান।

লড়াই শেষে যখন খানিকটা বিশ্রাম নেয়ার জন্য ফিরছিলেন মুডি তখন পুরানকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আমার মনে হয় পুরানের উইকেটকিপিংয়ে ফিরে যাওয়া উচিত।’ কোচের এমন কথার পর নিশ্চয় বুঝতে বাকি নেই কতটা বাজে বল করেছিলেন পুরান।

উমরানের সঙ্গে চ্যালেঞ্জে হারলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে অবশ্য হারেননি। এমনকি দলের বোলিং ইউনিটকেও হারতে দেননি। সঙ্গে হায়দরাবাদের নেট থেকে হয়ে উঠেছেন মুলতানের ‘রাজা’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *